খুলনার কয়রায় চাঁদা না দেওয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগে বাদী, তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ সহযোগী ৫ জনের নামে মামলা করেছেন আলমগীর হোসেন নামের এক ভূক্তভোগী। তিনি বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেছেন। আলমগীর পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও ১ নং কয়রা গ্রামের বাসিন্দা। মামলা নম্বর সিআর ১০২/২৫।
মামলার আসামিরা হলেন, কয়রা থানা পুলিশের তৎকালীন এসআই মো. সালাহউদ্দিন, ১ নং কয়রার মো. আনিসুর রহমান ও আরিফুল ইসলাম, মদিনাবাদ গ্রামের মফিজুল গাজী, ৪ নং কয়রার মো. আবু বকর।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিদের একমাত্র কাজই ছিল অসাধু পুলিশ অফিসারদের যোগসাজসে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা এবং তাদের সম্পত্তি দখল করা। তারই ফলশ্রুতিতে অন্যান্য আসামিদের ইন্ধনে ও সহযোগিতায় কয়রা থানা পুলিশের তৎকালিন উপ-পরিদর্শক মো. সালাহউদ্দিন বাদীর নিকট এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তবে তিনি চাঁদা না দেওয়ায় ২০২৪ সালের ২৫ জুন বাদীর বাসায় গিয়ে পরিবারের সম্মুখে পুনরায় এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বাদী টাকা দিতে অস্বীকার করলে পুলিশের এসআই সালাহউদ্দিন পিস্তল বের করে বাদীর মাথায় তাক করে জীবন নাশের হুমকি দেয়। প্রাণ বাঁচাতে বাদীর স্ত্রী আশে পাশ থেকে ৫০ হাজার টাকা যোগাড় করে এনে দিলেও ওই পুলিশ কর্মকর্তা বাদীর ওপর চড়াও হয়। বাকি টাকা না দেওয়ায় বাদীকে হেনস্থা ও হয়রানি করতে পরিকল্পিতভাবে আনিসুর রহমানকে বাদীর নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করতে বলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে ৮ জনকে আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কয়রাতে একটি মামলা করেন আনিসুর রহমান। তার নম্বর সিআর ৪২৯/২০২৪। সেই মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এসআই সালাহউদ্দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় বাদীর নিকট পুনরায় আরও ৫০ হাজার টাকা পারিতোষিক চায়। পরে অন্যান্য আসামিরাও বাদীর নিকট চাঁদা দাবি করে এবং তাকে ব্যবসা বন্ধসহ জেল খাটানোর হুমকি দেয়। পুলিশ কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন বাদীসহ অন্যান্য আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আটজনকে যুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার সাক্ষী ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের স্ত্রী জানান, পুলিশ এসে সকলের সামনে তার স্বামীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে চাঁদা দাবি করেন। স্বামীকে বাঁচাতে ওই রাতে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার দেনা করে টাকা দেন। তবুও তার স্বামীকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়।
কয়রা থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক মো. সালাউদ্দীন বর্তমানে পিবিআই, ঢাকাতে কর্মরত রয়েছেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মামলার বাদী আলমগীর হোসেন কেন আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন বুঝতেছি না। ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে আমার পরিচয় নেই।
বাদীর আইনজীবি এড. মঞ্জুর আলম নান্নু বলেন, আসামিরা বাদীর কাছে এক লাখ টাকা দাবি করলে ৫০ হাজার টাকা দেন। আর বাকি টাকা না দেওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বাদীর নামে একজন আসামির দ্বারা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাদীর নামের মামলা এখনও চলমান রয়েছে। পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে এবং ন্যায় বিচার পাবেন বলে তিনি আশা করেন।
খুলনা গেজেট/এএজে